মো. শিফাত মাহমুদ ফাহিম | বিশেষ প্রতিনিধি
নওগাঁর আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন একক আধিপত্যের খেলায় পরিণত হয়েছে। কেন্দ্রবিন্দুতে একজনই—ডা. রোক্সানা হ্যাপি। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বছরের পর বছর ধরে একই কর্মস্থলে থেকে অনিয়ম আর দুর্নীতিকে করেছেন গা-সওয়া।
সরকারি বিধি অনুযায়ী, কোন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা একটানা তিন বছরের বেশি সময় একই কর্মস্থলে থাকতে পারেন না। অথচ ডা. হ্যাপি তিন বছর পেরিয়ে বহু আগেই ঢুকেছেন ‘অবৈধ অতিরিক্ত সময়ে’। বদলির আদেশ এসেছে—থামেনি। প্রশাসন নড়েছে—কিন্তু হ্যাপির চেয়ার নড়ে না। প্রশ্ন ওঠে—তাহলে কে এই অদৃশ্য ছায়াশক্তি যিনি এমন নিরাপদ ছাতার নিচে বসে থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে করছেন পচিয়ে?
বদলির পরেও বদলায়নি ‘অবস্থা’
০৫ আগস্টের পর ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের সময় যখন অন্যান্য কর্মকর্তা বদলির ঝড়ে উড়ে গেছেন, তখনো হ্যাপির কেশাগ্র স্পর্শ করেনি বাতাস। বদলির কাগজ ছিল, নির্দেশ ছিল, কিন্তু কার্যকর হয়নি। কেন? স্থানীয়রা বলছেন—‘তার সিন্ডিকেট এতটাই প্রভাবশালী যে চাইলেও কেউ স্পর্শ করতে পারে না।’
দুর্নীতির ছকে বাঁধা আত্রাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাছ বিক্রি হয়েছে টেন্ডার ছাড়াই। কয়েক দফা মেরামতের পর গায়েব হয়ে গেছে মালামাল। ছয়টি জেনারেটরের মেরামতের বিলও এসেছে হ্যাপির অ্যাকাউন্টে। এমনকি মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের জন্য তোলা চাঁদার টাকাও পৌঁছায়নি নির্ধারিত হাতে। সদস্যদের কাছ থেকে নেয়া টাকায় কে আয় করে, তার হিসাব চাইলে ‘বিড়ালের পেটে মাছ’ ধরা পড়বে—এমন মন্তব্য করছেন স্থানীয়রা।
‘আমি যেখানে চাই, সেখানেই থাকব’ — রোক্সানা হ্যাপি
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি এই কর্মকর্তা দিন দিন মিডিয়া, ব্যবসায়ী, ঠিকাদারদের সঙ্গে গড়েছেন সুদৃঢ় নেটওয়ার্ক। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন তার ব্যক্তিগত সাম্রাজ্যে পরিণত। বদলি নিয়ে কেউ কথা বললেই পাল্টা হুমকি কিংবা উপহাস। সহকর্মীরা মুখ খুলতে ভয় পান। এমনকি কেউ কেউ মুখ ফুঁটেও বলছেন—“তার পেছনে এমন শক্তি আছে, যা আমরা স্পর্শ করতে পারি না।”
উর্ধ্বতনদের নীরবতা: মদদ নাকি ব্যর্থতা?
একাধিকবার নওগাঁর সিভিল সার্জনকে জানানো হলেও দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ডা. আমিনুল ইসলাম নামমাত্র আশ্বাস দিয়ে বলেন, “অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবো।” কিন্তু প্রশ্ন হলো—অভিযোগ কি এখনও পৌঁছায়নি, নাকি চোখ বন্ধ করে থাকা সুবিধাজনক?
শেষ কথা
ডা. রোক্সানা হ্যাপির বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমলেও, তার পদ-পদবি অটুট। বদলির আদেশকে তোয়াক্কা না করে বছরের পর বছর এক জায়গায় বসে থাকা একজন সরকারি কর্মকর্তার জন্য কি আলাদা আইন আছে? নাকি সরকারি স্বাস্থ্যসেবাও আজ কিছু দুর্নীতিবাজের ‘বেক্তিগত সম্পত্তি’তে পরিণত হয়েছে?
এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কি জেগে উঠবে? নাকি এভাবেই একজন ‘স্বাস্থ্য সম্রাজ্ঞী’র বেদখল রাজত্ব চলতেই থাকবে?নিয়ম ভাঙার রাজত্ব, দুর্নীতির পাহাড়, তবুও টলছে না চেয়ার।
Leave a Reply