মো.শিফাত মাহমুদ ফাহিম,বিশেষ প্রতিনিধি:নওগাঁ জেলার রাণীনগরে প্রীতম ও প্রিয়সী নামে দুই অসহায় শিশু শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাকিবুল হাসান। আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে দুই ভাইবোনের হাতে ১৫ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন তিনি।
চেক প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিশু দু’টির কাকা পলাশ চন্দ্র প্রামানিক ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনছার আলী। সহায়তা পেয়ে আনন্দে মুখরিত দুই শিশু জানায়, তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়।
১১ বছর বয়সী প্রীতম বর্তমানে সপ্তম শ্রেণিতে ও ৭ বছর বয়সী প্রিয়সী দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। তারা দুজনেই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ডাবলু প্রামানিকের সন্তান। শিশুদ্বয়ের মা পূর্ণিমা চিকিৎসার অভাবে গত ১১ এপ্রিল নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগের দিনও তার ইচ্ছে ছিল— সন্তানদের পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করবেন।
শিশু দুটির দেখভাল করছেন তাদের কাকা পলাশ চন্দ্র প্রামানিক। তাদের বাড়ি রাণীনগর উপজেলার কুজাইল হিন্দুপাড়া গ্রামে। নিজের দুঃখের কথা ভুলে পলাশ এখন ভাইঝিয়েদের ভবিষ্যতের জন্য লড়ছেন। জীবিকার জন্য তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে সিঙ্গাড়া বিক্রি করেন। গ্রাজুয়েশন শেষ করেও চাকরির পিছনে না ছুটে দুই শিশুর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন এই তরুণ।
চেক প্রদান শেষে ইউএনও রাকিবুল হাসান বলেন,
“তোমরা দুই ভাইবোন পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। আমি সব সময় তোমাদের পাশে আছি। তোমাদের জন্য দোয়া রইল।”
সাধারণ পোশাকে, পুরোনো স্কুলব্যাগ কাঁধে নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যায় প্রীতম ও প্রিয়সী। কখনো কখনো না খেয়েই কাটে তাদের ক্লাসের সময়। নতুন জামাকাপড়, দামি খাতা-কলম নেই, তবুও স্বপ্ন দেখে বন্ধুবান্ধবের মতোই বড় হওয়ার।
পলাশ চন্দ্র বলেন,
“ছেলের গাইড বই কিনতে এখনই হাত পাততে হচ্ছে। তবে ভাবির স্বপ্ন পূরণের আশায় সব চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
একদিকে নিজের অভাব-অনটনের জীবন, অন্যদিকে ভাইয়ের সন্তানদের মানুষ করার দায়— এই দ্বৈত লড়াইয়ে পলাশ একাই এগিয়ে চলেছেন। সমাজের সহায়তা ছাড়া হয়তো এই স্বপ্নগুলো একদিন ঝরে পড়বে। তাই সমাজের সামর্থ্যবানদের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা।
Leave a Reply