সাভার প্রতিনিধিঃ সাভারের আমিনবাজারে সাংবাদিককে মারধরকারী অনুমোদনহীন সমিতি খুলে সাধারন মানুষের কোটি টাকা আত্মসাৎকারী রাজু আহমেদ শ্যামল ও তার ছোটভাই সুমনের বিরুদ্ধে গত পাঁচ দিনেও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মোজাম্মেল হোসেন রাতুল। টাকা লুটের তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তাকে মারধর করে ক্যামেরাসহ গুরুত্বপূর্ন কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। এঘটনায় প্রতিকার চেয়ে সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও গত পাঁচ দিনেও রহস্যজনক কারনে মামলাটি নথিভুক্ত করেনি সাভার মডেল থানা পুলিশ।
ভুক্তভোগী সংবাদকর্মী মোজাম্মেল হোসেন রাতুল সাভারের আনন্দপুর এলাকার শেখ সাইফুর রহমানের ছেলে। তিনি বর্তমানে দৈনিক ভোরের সময় পত্রিকায় স্টাফ রির্পোটার হিসেবে কর্মরত আছেন।
হামলার ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন সাভারের আমিনবাজার ইউনিয়নের বড়দেশী গ্রামের আজাহার উদ্দিনের ছেলে কথিত যুবলীগ নেতা রাজু আহমেদ শ্যামল (৪২) ও তার সহযোগী ছোটভাই সুমন আহমেদ (৩২) ও পাঁচগাছিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে মোঃ আব্দুল্লাহসহ (৩৩) অজ্ঞাত পরিচয় ৭/৮ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী।
হামলার শিকার সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন রাতুল অভিযোগ করেন, সাভারের আমিনবাজার এলাকায় ‘প্রীতি সমাজ কল্যাণ সমিতি’ একটি অনুমোদনহীন সমিতি খুলে কথিত যুবলীগ নেতা রাজু আহমেদ শ্যামল সাধারন মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে কোটি আত্মসাৎ করেছেন। এঘটনায় প্রতারনার শিকার গ্রাহকেরা এলাকায় সালিশ বিচার, জিডি এমনকি মামলা করার করেও কোনো সুরাহা পায়নি। উল্টো সাধারণ গ্রাহকদের ভয়ভীতি ও মারধর করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করানোর অভিযোগ রয়েছে শ্যামল ও সুমনের বিরুদ্ধে।
তিনি আরও বলেন, গত ১ জানুয়ারী সরেজমিনে আমিনবাজার এলাকায় সমিতির টাকা লোপাটের তথ্য সংগ্রহ করে বাসায় ফেরার পথে আনুমানিক রাত ১০ টার দিকে বড়দেশি এলাকায় পৌছলে পুর্ব পরিকল্পিতভাবে কথিক যুবলীগ নেতা রাজু আহম্মেদ শ্যামল, তার ছোট ভাই সুমন, সহযোগী আব্দুল্লাহসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৭/৮ আমার গতিরোধ করে প্রথমে আমার ক্যামেরা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। একপর্যায়ে তারা বেলচা, লাঠিসোঠা, কেচিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আমাকে এলোপাথারিভাবে মারধর করে হত্যার চেষ্টা চালায়। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় সেখান থেকে উদ্ধার হয়ে তাৎক্ষনিকভাবে আমিনবাজার ফাঁড়ির ইনচার্য হারুন অর রশিদকে অবহিত করি। তার পরামর্শে পরর্বীতে ঘটনাটি জানিয়ে সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। তবে ঘটনার পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারনে থানা পুলিশ এখনও আমার অভিযোগটি আমলে নিয়ে নথিভুক্ত করেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রীতি সমাজ কল্যান সঞ্চয় প্রকল্প নামক সমিতিতে কেউ দৈনিক আবার কেউ মাসিক ভিত্তিক টাকা জমালেও কেউই টাকা ফেরত পাননি। প্রতিষ্ঠানটির নামে নিন্মবিত্ত অসহায় মানুষকে লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে বাদী ও সাক্ষীরাসহ আরও নিরীহ লোকদের বিভিন্ন মেয়াদী অর্থ হাতিয়ে নেন রাজু আহমেদ শ্যামল ও তার সহযোগীরা। সমিতিটির পাস বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার, সেই হিসেবে আত্মসাতের টাকার পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
ভুক্তভোগী গ্রাহক সেলিম হোসেন বলেন, কেউ পাওনা টাকা চাইতে গেলেই শ্যামল ও তার ভাই সুমন বলেন আমরা রাজনীতি করি। থানা পুলিশ ও প্রশাসন আমাদের কথায় চলে। চেয়ারম্যানও আমাদের লোক। বেশি বাড়াবাড়ি করলে এলাকায় থাকতে থাকতে পারবিনা। অনেক সময় লাঠিসোটা নিয়ে বাড়িতে সন্ত্রাসীদের পাঠায়। আমরা টাকার জন্য মামলা করেছি, কিন্তু টাকা পাবো কিনা জানিনা। ‘শ্যামলের কাজই হচ্ছে বর্তমানে মাদক বেচাকেনা। নতুন কাউকে ব্যবসা ধরিয়ে দিয়ে তাকে পুলিশে দিয়ে ধরানো। আবার ওই আসামিকে ছাড়াতে পুলিশকে টাকা দেওয়ার নাম করে মোটা অংকের টাকা খসানো। এলাকায় কেউ বিদেশ থেকে আসলে তার বাড়িতে মাস্তান পাঠিয়ে টাকা আদায় করা। আবার কেউ নিজের জায়গাতেও বাড়ি করতে গেলে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা। তাকে টাকা না দিয়ে কেউ বাড়ির নির্মাণ কাজ করতে পারে না। তাই বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
জানতে চাইলে আমিনবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রকিব আহম্মেদ বলেন, সমিটির টাকার বিষয়ে আমার কাছে অনেকেই মৌখিক অভিযোগ করলেও কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। এঘটনায় ভুক্তভোগীরা আদালতে মামলা দায়ের করেছে বিধায় এটা এখন আমার এখতিয়ারের বাহিরে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজু আহমেদ শ্যামল বলেন, আমরা ৭ জনে মিলে একটি সমিতি করেছিলাম। গত ইউপি নির্বাচনের আগে যারা আমার কাছে টাকা পেতো সকলের টাকা পরিশোধ করেছি। এরপরও কেউ যদি টাকা পেয়ে থাকে আমার সাথে যোগাযোগ করলে তাদের টাকা ফেরত দিয়ে দিবো। ফাহিমা নামে যে গ্রাহক মামলা করেছে সে কোন টাকা পাবেনা। মিথ্যা মামলাটি বর্তমানে পিবিআইয়ে তদন্তনাধীন রয়েছে। এছাড়া সাংবাদিক রাতুলকে মারধরের বিষয়টি সম্পুর্ন মিথ্যা ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেদিন আমি এলাকায় ছিলামনা।
সাভারের আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্য এসআই হারুন অর রশিদ বলেন, সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে ওসি স্যারের সাথে কথা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এঘটনায় মামলা রুজু করে আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হবে।
Leave a Reply