মো.শিফাত মাহমুদ ফাহিম,বিশেষ প্রতিনিধি:নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া-কাশিয়াবাড়ী রাস্তার মাঝামাঝি পশ্চিম পাশে এই সিসা কারখানাটি গড়ে উঠেছে।
দিনদিন দেশে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা,ইজিবাইক এর সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।এই কারনে ব্যাটারির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যাপক হারে।আর ব্যাটারি তৈরির অন্যতম উপাদান সিসার চাহিদা ও বাড়ছে প্রচুর পরিমানে।তাই পুরোনো ব্যাটারি থেকে সিসা তৈরির জন্য যত্রতত্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হচ্ছে সিসা তৈরির কারখানা।তারই ন্যায় অবৈধ ভাবে উপজেলার কাশিয়াবাড়ী টু ভোঁপাড়া রাস্তার পশ্চিম পাশে “আর.এস.এস মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ” নামক একটি অবৈধ সিসা তৈরীর কারখানা গড়ে তুলেছে ইউপি চেয়ারম্যান সম্রাট।
দূর থেকে অথবা কাছে গিয়ে দেখলে মনে হতে পারে এটি পরিত্যক্ত একটি কারখানা,গেটে তালা ঝুলানো লোকজনের কোনো সাড়াশব্দ নেই ইত্যাদি।কোন ভাবেই বুঝার উপায় নেই ভিতরে লোকজন আছে এবং কাজ ও চলছে।এলাকাবাসীরা বলেন দিনের বেলায় কারখানার প্রধান ফটক বন্ধ করে ভিতরে কাজ চালিয়ে যায়।আর রাত হলেই কারখানার ভিতর চুল্লী জ্বালিয়ে সিসা প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু করে এতে এলাকাবাসীকে শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বলে ও জানাযায়।
বন্যার সময় রাতের আঁধারে অথবা দিনের আলোতেই এই কারখানার ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ গুলো কাশিয়াবাড়ী এবং ভোঁপাড়া বিলের পানিতে তারা ফেলে আসছে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ।ফলে মৎস্য ভাণ্ডার খ্যাত কাশিয়াবাড়ী, ভোঁপাড়া, সোনাইডাঙ্গাঁ,জামগ্রাম এলাকার বিল গুলোর মাছ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে হচ্ছে ক্ষতির মুখে পড়ছে এই এলাকার মৎস্যজীবী লোকজন সহ সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, সম্রাট চেয়ারম্যান প্রভাবশালী বিএনপি নেতা হওয়ায় তারা বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসন ও নাকি নানা টালবাহানা করেন এমন অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী।এ কারখানা প্রথমে তিনি তার তার নিজ গ্রাম পালশা ও কচুয়া রাস্তার মাঝামাঝি স্থানে গড়ে তুলেছিলেন।কিছুদিন যেতেই এলাকাবাসীর তোপের মুখে ওই স্থান থেকে কারখানাটি স্বান্তনার করে সরিয়ে আনুমানিক ২/৩ বছর পূর্বে আওয়ামী লোকজনের সহযোগিতায় এখানে আবারও গড়ে তুলেন।
এ বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড.এফএম আলী হায়দার সাথে মুঠোফোনে কথা বলা হলে তিনি অপরপ্রান্ত থেকে বলেন,সিসা তৈরির এমন অবৈধ কারখানার ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট ও বিলের জীবকূল অস্তিত্ব টিকে থাকার সংকটে পড়বে। হুমকির মুখে পড়বে এই বিল গুলোর জীববৈচিত্র্য ও বিল পাড়সহ আশপাশের গ্রামের মানুষ।তিনি আরও বলেন,মানুষদের মাঝে দেখা দিবে বিভিন্ন মরণব্যাধির যার হাত থেকে বাঁচা সহজ নয় তাই এখনই জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এটি বন্ধ করে দেওয়া।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায় একখণ্ড জমির ওপর চারদিকে টিন দ্বারা বেষ্টিত ঘেরা বিশাল একটি কারখানায়।সেখানে কাজ করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় অর্ধশাধিক শ্রমিক।তাদের সবাইকে পুরোনো ব্যাটারি থেকে সিসা প্রস্তুতের কার্যক্রম চালাতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন শ্রমিক জানান, তারা দিনে পুরোনো ব্যাটারি ভেঙে আলাদা করে আর রাতে একটি অংশ দিয়ে তারা সিসা তৈরি করেন।পরে সেগুলো ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় বিক্রিয়ের জন্য।
আর এই কাজ দেখা শোনার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন সান্তাহার ও নওগাঁ সদরের থেকে জীবিকার ত্যাগিদে আসা দুইজন ম্যানেজার।তারা তাদের নাম ও পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানাই। তবে এর মালিক উপজেলার পালশা গ্রামের মো. সম্রাট হোসেন (৪৫) (চেয়ারম্যান ০৬ নং মনিয়ারী ইউপি,থানা বিএনপি নেতা)।তার প্রভাবপ্রতিপত্তির কাছে জিম্মি দশায় এলাকাবাসী,এলাকাবাসীকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে তিনি একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে গড়ে তুলেছেন এই অবৈধ সিসা তৈরীর কারখানা।
কারখানার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ম্যানেজারের সাথে কথা বলা হলে একজন বলেন, এখন তো আর বিলে পানি নেই,তাই মাছের কোনো প্রকার ক্ষতি ও হচ্ছে না। ধুমা-টুমা একটু উড়ে আরকি। তবে ব্যাটারির পরিত্যক্ত ময়লা-আবর্জনা থাকলে সেগুলো গাড়ি দিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়।আশপাশের গ্রামের মৎস্যজীবী লোকজন অভিযোগ করে বলেন, কারখানার ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আমাদের এসব বিলের পানিতে মিশে সাপ, মাছ, ব্যাঙসহ বিভিন্ন উপকারী পোকা-মাকড় মারা যায়।বিষয়টি প্রশাসনকে বার বার জানিয়েও কোন লাভ হয়নি।আমরা জানালে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থায় গ্রহণ করেনা আমরা তাহলে কাকে জানাবো?কে করবে এদের বিচার?
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ তালুকদার এর সাথে মুঠোফোনে কথা বলা হলে তিনি বলেন, কারখানাটির ধাতব পদার্থ গুলো বিলের পানিতে ও মাটি মাটিতে মিশে চরম ক্ষতি সাধন করে।ওই মাটি থেকে যে সকল ফসল উৎপাদন করা হবে এবং সেগুলো যখন মানুষ খাবার হিসাবে গ্রহণ করবে তখন মানুষের শরীরের খাবার সাথে প্রবেশ করে নানা ধরনের রোগব্যাধির সৃষ্টি করবে।
তিনি আরও বলেন,যখন বিভিন্ন ধরনের ফসলে ফুল আসে ওই সময় সিসার বজ্র, ধোঁয়া তথা ক্ষতিকর ধাতব গুলো ফুলের সাথে মিশে ফসলে প্রবেশ করে।এরপর তা খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। সিসার বজ্র ও ধোঁয়ার কারনে ফসল ও গাছপালা তথা জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হয়।ওই এলাকার কৃষকগণসহ সচেতন মহলের উচিৎ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অফিসে লিখিত ভাবে জানানো।আর এতেই মিলবে মুক্তি,নয়তো পরিবেশসহ জনজীবন হুমকির মুখে পড়বে। মানবদেহে ক্যান্সার,কিডনি জনিত সমস্যা সহ বিভিন্ন রোগব্যাধির সৃষ্টি হবে।
এ বিষেয় আত্রাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাকসুদুল রহমান বলেন, বিলের মাঝে এই ধরনের সিসা তৈরির কারখানা মৎস্য সম্পদের জন্য চরম হুমকি।শুধু মৎস্য সম্পদের উপর এর প্রভাব পড়বে এমনটি, এটির ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে জীববৈচিত্র্যের উপর।
কারাখানার বজ্র পানিতে মিশে মাছের শরীরের প্রবেশ করবে এরপর এই মাছ যখন মানুষ খাবার হিসাবে গ্রহণ করবে তখন তা মানবদেহে প্রবেশ করবে।তিনি আরও বলেন,মৎস সম্পদসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এলাকার সচেতন মানুষদের এগিয়ে আসা উচিৎ এবং এ ধরনের এই সিসা কারখানার বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদ গড়ে তোলা।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য কারখানার মালিক বিএনপি নেতা সম্রাট চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন সহ নওগাঁ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর কর্মকর্তার সরকারি ফোন নং এ একাধিক বার কল দেওয়া হলেও কল রিসিভ করেননি তারা।
Leave a Reply