সাভার প্রতিনিধি:শিল্পাঞ্চল সাভারের আশুলিয়ায় পবিত্র শবে বরাত এর রাতে মসজিদে সুদখোর ও ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে বয়ান (ওয়াজ) করায় ইমামকে লাঞ্ছিত করে মসজিদের চাকুরী থেকে অব্যহতি দিয়ে এলাকা থেকে তারিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বলি ভদ্রের পাশে তালপট্রি এলাকার বায়তুল আকসা মসজিদের ইমাম মুফতি জুনায়েদ হাবিব সুদ ও ঘুষের বিরুদ্ধে শবেবরাত উপলক্ষে বয়ান করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উনার ওপর হামলা করতে আসে ধামসোনা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ মণ্ডলের ভাই সুদখোর আওয়ামী.কর্মী আক্কাস আলী মণ্ডল। এছাড়াও আক্কাস আলী তালপট্টি এলাকায় জুয়ার আসর পরিচালনার মূল হোতা। তার নেতৃত্বে প্রায় প্রতিদিনই বসে বিশাল জোয়ার আসর । এলাকা জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে তার সুদের ব্যবসা। তার বিরুদ্ধে মানুষের টাকা আত্মসাৎসহ একাধিক মামলাও রয়েছে। জানা যায় অদৃশ্য কারণে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খাচ্ছে।
আক্কাস আলী উক্ত মসজিদের উপদেষ্টা। এ নেক্কার জনক ঘটনাটির কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে বইতে থাকে আলোচনা ও সমলোচনার ঝড়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মাঝে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কালবেলাকে জানান,মন্ডল পরিবারের কাছে জিম্মি পুরো তালপট্রি এলাকা। এখানে তাদের অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মতো কেউ নেই।
তারা আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে, তাদের ভাই লতিফ মণ্ডল ধামসোনা ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার মিছিল যেনো থামছেইনা।
চাঁদাবাজি,দখলবাজি, নারী নির্যাতন, সুদের ব্যবসা সহ এমন কোন অপকর্ম নেই যা আক্কাস মন্ডল করেনা।
ক্ষমতার প্রভাবে রপ্তানী ও বলিভদ্র এলাকায় সরকারী রাস্তায় দোকান বসিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে আক্কাস মন্ডল ও তার বাহিনীর সদস্যরা। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বার বার সংবাদ প্রচার হলেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। ধারাবাহিক ভাবে আক্কাস আলি মন্ডল গ্যাং একের পর এক অপকর্ম, জুলুম, নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষদের ওপর।
আক্কাস গ্যাং এর অত্যাচার থেকে শেষ পর্যন্ত মসজিদের ইমামও রক্ষা পায়নি।
এ বিষয় নিয়ে বায়তুল আসকা মসজিদের ইমাম মুফতি জুনায়েদ হাবিব এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। সেই সাথে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, শবেবরাত রজনীতে (০৮ মার্চ) মঙ্গলবার রাতে, মসজিদে বয়ান করছিলাম সুদ ও ঘুষের বিরুদ্ধে। বয়ান চলাকালীন সময় আক্কাস আলী মণ্ডল বয়ান বন্ধ করতে বলেন। বয়ান বন্ধ করতেই উনি তেড়ে আসেন আমার দিকে। আমাকে অকথ্য বাসায় গালাগাল করেন। এতে মুসল্লিরা ক্ষুব্ধ হয়ে হৈ হৈ করে ওঠে উনাকে গণধোলাই দিতে উদ্যত হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আমি আক্কাস মন্ডলকে জড়িয়ে ধরে মারধরের হাত থেকে রক্ষা করি। বিষয়টি নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করতেও আমি উপস্থিত মুসল্লিদের অনুরোধ করি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে উনি চলে যান।
তিনি আরও বলেন,সুদ ঘুষের বিরুদ্ধে বয়ান করায় আমার আজ চাকুরী হারাতে হলো। আমাকে একদিনের সময়ও দেওয়া হলো না। আমাকে চাকুরী থেকে বিতাড়িত করায় হয়তো পরিবার নিয়ে কিছুদিন আমার কষ্টে কাটাতে হবে। ইসলামের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে আজ আমি লাঞ্চিত হয়েছি। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এ অন্যায় মেনে নেয়া যায় না। আমি এই মসজিদে দীর্ঘ ০৮ বছর যাবৎ সম্মানের সহিত ইমামতি করছি। আজ সত্য কথা বলায় আমার চাকুরী হারাতে হলো। মুঠো ফোনে ঘটনার বর্ণনা দেয়াকালে কান্নায় ভেঙে পড়েন লাঞ্ছিত ইমাম মুফতি মোঃ জুনায়েদ হাবিব। মসজিদ ভর্তি মানুষের সামনে তাকে অপমানের বিচার আল্লাহ একদিন নিশ্চয়ই করবেন বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন অসহায় এই ইমাম। লাঞ্ছিত ইমাম মুফতি মোঃ জুনায়েদ হাবিব ময়মনসিংহের কারাকান্দা থানার মধুপুর গ্রামের মুক্তিযুদ্ধা আব্দুল হাকিম এর বড় ছেলে।
ঘটনার সত্যতার বিষয়ে জানতে চেয়ে অভিযুক্ত আক্কাস আলীকে ফোন করলে কালবেলা প্রতিনিধিকে বলেন, হুম আমি ইমাম কে লাঞ্ছিত করছি ; আপনি যা পারেন করেন গিয়া। বেশি বাড়াবাড়ি করলে ভালো হবে না।
অভিযোগ রয়েছে গায়ের জোরে মসজিদের উপদেষ্টার দায়িত্ব তিনি পালন করছেন। এমন জঘন্য একজন ব্যক্তি মসজিদের উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকতে পারেন না বলে বলছেন স্থানীয় মুসল্লিরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা কালবেলার সাথে এসব কথা বলেন।
Leave a Reply