নিজস্ব প্রতিবেদক:
হত্যা মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি ও নানা অভিযোগসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘ দিন ধরেই আলোচিত-সমালোচিত হৃদয় ব্যাপারী নামে এক যুবলীগ নেতা। সম্প্রতি ভোল বদলে বিএনপির সঙ্গে মিলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা জানান, কিশোর কাল থেকেই অপরাধে হাত পাকান হৃদয় ব্যাপারী। এরপর একে একে নানা অপরাধে যুক্ত হন তিনি। ২০০৮ সালে তার পরিবারের সদস্যদের নাম আসে আলোচিত সুমন দাশ হত্যা মামলায়। ওই মামলাটি টাকার বিনিময়ে আপসে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মামলায় নাম ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করার।
স্থানীয়রা জানান ডিবির দুই সদস্য এবং নারুলি ফারির এক পুলিশ কর্মকর্তার প্রভাব খাটিয়ে হৃদয় স্থানীয়দের বিভিন্নভাবে মামলা হামলার হুমকি দিয়ে মামলা বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে।
সূত্র বলছে, এক সময় বগুড়া জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশিস পোদ্দার লিটনের নিজস্ব বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন হৃদয় ব্যাপারী। এরই পুরষ্কার সরুপ বগুড়া সদর যুবলীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। সখ্যতা ছিল বগুড়া সদর আ.লীগের সাবেক এমপি রাগেবুল হাসান রিপুর সঙ্গেও।
বগুড়া সদরের উত্তর চেলোপাড়ার বাসিন্দারা বলছেন, হৃদয় দীর্ঘ দিন ধরেই এলাকাবাসীকে হয়রানি করে আসছেন। ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, চাঁদাবাজিসহ নানাভাবে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চেলোপাড়ার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,হৃদয়ের অত্যাচারে এলাকায় থাকা দায় হয়ে পড়েছে। সে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও আমাদের জ্বালিয়ে খেয়েছে এখন আবার নিজের খোলস পাল্টে বিএনপি’র সাথে মিশে গিয়ে আমাদের আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। অবৈধ উপায়ে অর্জিত তার অঘাত সম্পত্তি ও টাকা পয়সা রয়েছে । এসব টাকা পয়সা বিভিন্ন পর্যায়ের গুন্ডা পান্ডা এবং নেতাদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে নিজেই এখন অঘোষিত সম্রাটে পরিণত হয়েছে। থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে সে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। আমরা তার অত্যাচার থেকে মুক্তি চাই।
এদিকে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রীতিমতো ভোল বদলেছেন হৃদয় ব্যাপারী।
তথ্য বলছে, সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দেয়। হৃদয় ব্যাপারীও সেই সময় রাতারাতি হাওয়া হয়ে যান। তবে পরবর্তীতে সাম্প্রতিক কালে তিনি আবারও অবাধে পুরনো অপরাধ কার্যক্রম চালু করেছেন।
সূত্র বলছে, বগুরা জেলা শহরে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এক নেতার বাসায় অবাধে যাতায়াত বেড়েছে হৃদয় ব্যাপারীর। সেই নেতার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে আবারও সক্রিয় হয়েছেন তিনি। বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের সাথে ছবি উঠিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকে বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত করানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন এই হৃদয় ব্যাপারী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেন, হৃদয় ব্যাপারী আগে যুবলীগ করতো। এখন বিএনপির সঙ্গে ভিড়ে গেছে। সে আবারও চাঁদাবাজি, হয়রানিসহ সব কর্মকাণ্ড চালু করেছে। তার বাবা ছিল পকেটমার এবং মায়ের রয়েছে বিশাল সুদের কারবার। লাখে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা প্রফিটে দেয়া হয় সুদের টাকা। কেউ সঠিক সময়ে সুদের টাকা পরিশোধ না করতে পারলে তার উপর নেমে আসে নির্যাতন। সুধের কারবারের পাশাপাশি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি দখল বাজি করে অঘাত সম্পত্তির মালিক বনেছেন এই হৃদয় বেপারী। সেই সব কালো টাকা এখন বিএনপি’র বিভিন্ন শ্রেণীর নেতাদের মধ্যে বিলিয়ে দিচ্ছেন তিনি এবং টাকার বিনিময়ে স্থানীয় বিএনপির সাথে মিশে যাওয়ার অপচেষ্টা করছেন।
জানুয়ারির প্রথম দিকে বগুড়ার নিউমার্কেট এলাকার ক্রোকারিজ ব্যাবসী ইব্রাহিমকে দল বল নিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ১৭ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় হৃদয় বাহিনী। তথ্য বলছে ইব্রাহিম, হৃদয় এবং তার মায়ের কাছ থেকে মাত্র পাঁচ লাখ টাকা সুদ হিসেবে নিয়েছিলো কয়েক বছর আগে,সেই টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এমন কান্ড ঘটান হৃদয়। ১৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে হৃদয় এলিয়েন গাড়ি কিনে দাপিয়ে বেরাচ্ছে গোটা এলাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ভুক্তভোগী বলেন, সুদের টাকা নিয়ে সময় মতো পরিশোধ করতে না পারায় তাকে করা হয়েছিল মারধর সহ শারীরিক নির্যাতন।
এসব ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে ও হৃদয় ব্যাপারীকে যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে স্থানীয় প্রশাসন ও বিএনপির হাইকমান্ডের নজর দেওয়ার দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
হৃদয় ব্যাপারী বগুড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা। তিনি বগুড়া সদরের উত্তর চেলোপাড়া এলাকার মৃত আলম ব্যাপারীর ছেলে।
এসব বিষয়ে হৃদয় ব্যাপারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল ধরেননি। এছাড়া মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাহ বলেন, এ রকম বিষয় আমার জানা নেই। তবে চাঁদাবাজি-গুন্ডামিতে যেই জড়িত থাকুন না কেনো, তার বিরুদ্ধে দলীয় এবং আইনগত উভয়ভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ায় দলীয় ১২ জনকে বহিস্কার করা হয়েছে। আর ফ্যাসিস্টদের দল থেকে সনুযোগ-সন্ধানী কেউ এসে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে গুন্ডামি-চাঁদাবাজি করলে সেও রেহাই পাবে না
Leave a Reply