সাভার প্রতিনিধি :
ঢাকার অদূরে সাভারে মধ্যরাতে একটি বাড়িতে গ্রিল কেটে প্রবেশ করে বাড়ির সবাইকে অচেতন করে এক কিশোরীর হাত-পা বেঁধে ও মুখে রুমাল গুঁজে জোরপূর্বক গণধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। এসময় তারা ঘরে থাকা স্বর্ণলংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোনও লূট করে নিয়ে যায়।
এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় এক সাবেক ইউপি সদস্যের সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরেই পরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দিবাগত গভীর রাতে সাভার মডেল থানায় এঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
এর আগে সোমবার (২১ আগস্ট) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের লুটের চর উত্তরপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর বড় ভাই সাংবাদিকদের বলেন, আমি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করে চাকরির সন্ধান করছি। বাবা একটি ব্যাংকের প্রাইভেটকার চালান, মা গৃহিনী। আর ছোট বোন স্কুলে পড়ে। গতকাল রাতে আব্বু, আম্মু ও আমার ছোট বোন আগেই ভাত খেয়ে নিছে। পরে খেয়েছি আমি। ভাত খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে আম্মু আমারে বলছে, তোর আব্বু যেন কেমন করছে? আমার কেন জানি মনে হচ্ছে খাবারে কিছু একটা মেশানো হইছে। পরে আমার বাবার রুমে গিয়ে অনেক নাড়াচারা করলেও উনি সাড়া দেন নাই। আমি তখন মনে করছি আব্বু অসুস্থতার জন্য হয়ত ক্লান্ত। পরে আমার ছোট বোনের রুমে গিয়ে দেখি, তখন ও ফোনের হেডফোন কানে লাগিয়ে ভিডিও দেখতেছে। তখন আমার বোনের ঠোঁটটা একটু ভারভার ও চোখ ঘুমঘুম মনে হচ্ছিলো। এমন অবস্থা দেখে আমি যেন জাগতে পারি সে জন্য কফি বানিয়ে খাই। তারপর আমার রুমে গিয়ে মোবাইলে কথা বলতে বলতে কখন যেন ঘুমিয়ে যাই। তখন রাত দেড়টার মতো বাজে।
তিনি আরও জানান, পরে সকালে উঠে সব জানতে পারি। আমার বোনের মুখ থেকে শুনেছি, ওরা তিনজন গ্রিলকেটে ঘরে প্রবেশ করে। দুই জন ছিলো মধ্য বয়স্ক। তরুন বয়সের একজন আমার বোনের বেডরুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে ছিলো। আর দুইজন ওর হাত-পা বেঁধে মুখে রুমাল গুঁজে রেপড করেছে। আলমারি থেকে ২০ হাজার, আমার মানিব্যাগ থেকে ৫ হাজার, প্রায় দেড় ভরি স্বর্ণালংকার আর দুটি মোবাইল ফোনে নিয়ে গেছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার বোনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। ওর অবস্থা বেশি ভালো না। আমার আব্বু-আম্মুকেও সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছি।’
পরিকল্পিত ভাবে তাদের সাথে এই ঘটনা সংঘটিত করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘৪ বছর আগে সাড়ে চারকাঠা জমি কিনে একতলা বাড়ি করেছি। আমার আব্বু প্রাইভেটকার চালিয়ে অনেক কষ্টে এই বাড়িটা করেছে। কিন্তু আধাকাঠা জমি আমাদের পাশের জায়গার মালিক হাবিবুল্লাহ দখল করে নিছে। এরপর বিভিন্ন সময় রাতের বেলা আমাদের নানা ভাবে উৎপাত করা হতো। এঘটনায় আমরা মামলা করার পর থেকে তারা আমাদের উপর ক্ষুব্ধ। এসব ঘটনা থেকে আমার মনে হচ্ছে, আমাদের পরিবারের উপর এমন নির্যাতন পরিকল্পিত ভাবেই করা হয়েছে।’
সাবেক ইউপি সদস্য অভিযুক্ত হাবিবুল্লাহ হাবিব কালবেলাকে জানান আমাদের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা কালবেলাকে জানান, সাভারের ভাকুর্তায় একটি পরিবারের সবাইকে অচেতন করে লুট ও এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
Leave a Reply