মো.সোহেল রানা জেলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: অবশেষে বন্ধ হলো নিয়ম বহির্ভূতভাবে গড়ে ওঠা” নিউ আত্রাই ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার”। নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলা সদরে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই ব্যাঙের ছাতার ন্যায় গড়ে ওঠে ” নিউ আত্রাই ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার” নামের এই ক্লিনিকটি। নামে ক্লিনিক হলেও এটা মূলত একটা কসাইখানা। যেখানে প্রতিনিয়তই ঘটেছে নানা ধরনের অপ্রীতিকর এমনকি মানুষ মারা যাওয়ার মত ঘটনা।
গত ১৯ জুলাই শুক্রবার ২০২৪ তারিখে পাপিয়া (২৫) নামের এক সিজারিয়ান রোগী সেখানে ভর্তি হয়। সেখানে আবাসিক কোন ডাক্তার নেই, ভাড়া করা ডাক্তার মোঃ আকরাম হোসেন সেই দিন বিকেল ০৪.১০ এ সিজার অপারেশন করেন। এবং অপারেশন শেষে তিনি চলে যান এমনকি সেলাই পর্যন্ত করেন না। পরবর্তীতে ক্লিনিকের কথিত ডাক্তাররা সেলাই করেন। পরের দিন ২০ জুলাই শনিবার সকাল ০৯ টায় রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। কোনভাবেই জ্ঞান ফেরাতে না পেরে, ক্লিনিক এর কথিত ডাক্তার মোঃ সাগর, পরিচালক মোঃ বেলাল হোসেন, স্বত্বাধিকারী মোঃ সোহরাব হোসেন রোগীকে রাজশাহী নিয়ে যেতে বলেন। রোগীর আত্মীয়-স্বজন রোগীকে অজ্ঞান অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স যোগে “রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল” এ নিয়ে ভর্তি করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কর্তব্যরত ডাক্তার বলেন, রোগীর অবস্থা খুব আশঙ্কা জনক এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এখনই রক্ত দিতে হবে। তার কিছুক্ষণ পরেই রক্ত দেয়ার আগেই রোগী মারা যায়। পাপিয়ার জন্ম দেয়া একদিনের মেয়ে বাচ্চাটিকে নিয়ে পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে,” রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল”এর ডেথ সার্টিফিকেটে দেখা যায়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে এবং সিজার অপারেশনের সময় রোগীর শরীরে রক্ত না দেয়ায় এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানার জন্য উক্ত ক্লিনিকের, স্বত্বাধিকারী মোঃ সোহরাব হোসেন কে মোবাইল ফোনে কল দিলে, দেখা করতে চেয়ে উনি আর দেখা করেননি। এবং তারা তিন দিন ক্লিনিক টি বন্ধ রাখেন। তিনদিন পর ক্লিনিক খুললে, সেখানে সাংবাদিক গিয়ে মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে, এলাকার কিছু গুন্ডা মাস্তান নিয়ে বেলাল, সাগর এবং সোহরাব সাংবাদিকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। বিষয়টি “আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স”এ কর্মরত ডাঃ রোকসানা হ্যাপি (উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা) মহোদয় কে অবহিত করলে, তিনি বলেন বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, একটি প্রাইভেট ক্লিনিক বলতে যা বোঝায় তার কোন কিছুই নেই এই ক্লিনিক টিতে। এর আগেও এই ক্লিনিক এর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ পেয়েছি আমরা। সিভিল সার্জন (নওগাঁ) মহোদয় কে বিষয়টি অবগত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। তার ই ধারাবাহিকতায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম (সিভিল সার্জন নওগাঁ) মহোদয় ডাঃ রোকসানা হ্যাপি মহোদয় সহ অফিসের স্টাফ নিয়ে “নিউ আত্রাই ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার “পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে ক্লিনিক টিতে, কোন আবাসিক ডাক্তার, নার্স, প্যাথলজিস্ট, এমনকি ক্লিনিক এর রেগুলার লাইসেন্স পাওয়া যায়নি। ক্লিনিক এর মালিকের অনুরোধে ১৫ দিন সময় দেয়া হয় সবকিছু ঠিক করার জন্য কিন্তু ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও কোন কিছুই ঠিক করতে পারেননি। এবং প্রশাসনিকভাবে ক্লিনিক টি বন্ধ করে দেয়া হয়।
এই ভুয়া ক্লিনিকটি বন্ধ হওয়াতে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী সচেতন মহল স্বাস্থ্য প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এবং ডাঃ রোকসানা হ্যাপি মহোদয়ের এমন উদ্যোগকে সবাই স্বাগত জানিয়েছেন এবং তাদের দাবি ক্লিনিক নামের এমন কসাইখানা যেন আর না গড়ে ওঠে সেই সাথে তারা এই ভুয়া ক্লিনিকের সাথে যারা জড়িত তাদের শাস্তি দাবী করেন।
Leave a Reply