মোঃ শিফাত মাহমুদ ফাহিম,বিশেষ প্রতিনিধি: শত আইন করে ও যেনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভিতর ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৌরাত্ম্য। বর্তমান সময়ে তাদের অনৈতিক ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের কারনেই পুরো পুলিশ বাহিনী কলঙ্কিত এবং বিতর্কিত।
প্রতিনিয়ত শতশত ভালো কাজ করার পরও সাধারণ মানুষ পুলিশ বাহিনীর দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলে শুধু “এসআই মোনাক্কা” মার্কা কিছু অসৎ পুলিশ সদস্যদের কারনে।তাদের অবৈধ কার্মকাণ্ডের কারনে মাসুল দিতে হয় পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে।
সাম্প্রতিক এক গরীব অসহায় বৃদ্ধা মহিলার কাছ থেকে জোরপূর্বক ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ উঠেছে ঢাকার জেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত মতিঝিল থানার এসআই মোছাঃ মোনাক্কা আক্তারের বিরুদ্ধে।ভুক্তভোগী মোছাঃ মরিয়ম বেগম (৫৫) বলেন, আমার স্বামী নেই একটি ছেলে আছে সেও আমার খোঁজ খবর রাখেনা।জীবিকার ত্যাগিদে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতাম করোনাকালীন সময় আমার চাকুরী চলে যায় তারপর থেকে আর্থিক সংকটে পড়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করি।হঠাৎ করে পরিচয় হয় রেজাউল করিম সাগর ও এসআই মোনাক্কা নামের দুজনের ব্যক্তির সাথে তাদের মাধ্যমে লোকজন বিদেশ পাঠানো শুরু করি।
আমার একটি লোক তারা কথা মতই পাঠায় তারপর আরও ২টি পাসপোর্ট বই সহ ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা জমা দেই মোনাক্কা আর সাগরের কাছে।টাকা হাতে পাওয়ার পর থেকে তারা নানা টালবাহানা শুরু করে।দীর্ঘদিন ঘুরানোর পর তারা আমাকে দুটি ভিসা দেয়, ভিসা গুলো অন্যত্রে চেক করে জানতে পারি এসব জাল ভিসা।তখন আমি তাদের বিষয়টি অবগত করি এবং সেই সাথে আসল ভিসা দেওয়ার দাবি জানাই। আজ দেই কাল দেই বলে আমায় আরও কয়েক মাস ঘুরাইতে থাকে একপর্যায়ে তাদের এসব আচারনে আমি অতিষ্ঠ হয়ে নিকটস্থ মতিঝিল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিতে যাই।
থানায় প্রবেশ করতেই একজন পুলিশ সদস্য আমায় বলেন খালাম্মা কেন আসছেন?আমি বিস্তারিত খুলে বলি তখন উনি বলেন আপনি ঐ’যে ম্যাডাম বসে আছে আপনি উনার কাছে যান,ওখানে যেয়ে দেখি মোনাক্কা বসে আছেন।আমাকে বলে থানায় কেন আসছেন?আমি বলি আপনার আর আপনার দেবরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিতে আসছি ওসি স্যারের সাথে কথা বলে অভিযোগ দিবো।তখন আমাকে নানা আকুতি মিনতি করা শুরু করে সাইটে ডেকে নিয়ে।পরবর্তীতে খালা আজ আপনি চলে যান ২/৪ দিন পর এসে আমার সাথে দেখা করেন টাকা দিয়ে দিবো তখন ম্যাডামের কথা মত চলে যাই।
তারপরও উনার কথা মত আবারও থানায় আসি এবং উনার সাথে উনাদের দালাল অফিসে যাই।ঐ সময় আমার টাকা আমি বুঝাইয়া চাইলে এসআই ম্যাডাম বলে আপনি ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পাবেন না। আপনাকে ২ লক্ষ টাকা দিবো নিলে নিতে পারেন, না নিলে কোন টাকা আপনাকে দিতে পারবেনা।আমি অনেক কান্নাকাটি করি তারা দেবর ভাবি কোন কথায় আমার শুনেন’নি।ম্যাডাম বলে ওই ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা আপনার মাইর (লচ) আপনি ২ লক্ষ নিলে নিতে পারেন না নিলে নাই।
আমি বাধ্য হয়ে ২ লক্ষ টাকা নিতে চাই,ঐ দিন আমায় ১ লক্ষ টাকা দেয় সেখান থেকে ম্যাডাম ৩ হাজার টাকা জোরপূর্বক রেখে দেয়।নতুন করে আবার টাকা দেওয়ার তারিখ দেয় কিন্তু সেই তারিখে না দিয়ে ম্যাডাম আর সাগর মিলে আমায় অনেক দিন ঘুরাই।তারপর টাকা নেওয়ার ম্যাডামের সাথে টাকা নেওয়ার জন্য সাগরের অফিসে গেলে সেদিন সাগর ৫০ হাজার টাকা দেয় আর আর তারা দেবর ভাবি মিলে জোরপূর্বক সাদা কাগজে আমার কাছ একটি সই (সাক্ষর) নেয়।আমি সই দিতে অপারগতা স্বীকার করলে ম্যাডাম আমাকে গালিগালাজ করল বলে তুই কোন টাকা পাবিনা এখান থেকে যা।আমি নিরুপায় হয়ে সাদা কাগজে সাক্ষর করি।
তারপর সাগর ৫০ হাজার টাকা আমায় দেয় সেখান থেকে ম্যাডাম ১৫ হাজার টাকা (ঘুষ) জোরপূর্বক রেখে দেয়।আমি উনার হাত-পা ধরে অনেক কান্নাকাটি করি যার ভিডিও ফুটেজ আমার কাছে রয়েছে।উনি কোন কথায় শুনেন না,আমি উনার পিছু পিছু কান্না করতে করতে থানায় যেতে লাগি তখন ম্যাডাম ৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে ১০ হাজার রেখে দেয়।
গতকাল ১০ সেপ্টেম্বর আরও ৬০ হাজার টাকা আমায় দেয় আর তারা জোরপূর্বক আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে সাদা কাগজে সেই (সাক্ষর) নেয়।
ভুক্তভোগী মরিয়ম বেগম আরও বলেন আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ পুলিশ ডিপার্টমেন্টের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে এই এসআই মোনাক্কার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।সেই সাথে গরীব অসহায় মানুষদের (আমার) বাঁকি ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ফেরত চাই। ভুক্তভোগী আরও বলেন এসআই মোনাক্কার সহযোগিতায় সাগর মানবপাচার ও জাল ভিসার ব্যবসা করে।আর এই কারনে মলূত তাকে ওসি’র সাথে দেখা করতে ও থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে দেয়নি মোনাক্কা।
এ বিষয় নিয়ে মতিঝিল থানার এসআই মোছাঃ মোনাক্কার সাথে মুঠোফোন(+880 1842-4500–)যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।পরবর্তীতে উনার হোয়াটসঅ্যাপে জোরপূর্বক ঘুষ গ্রহনের ভিডিও পাঠিয়ে দিলে উনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।সেই সাথে মানবপ্রচারকারী (আদম ব্যবসায়ী) রেজাউল করিম সাগর উনার দেবর হয় বলেও স্বীকার করেন।
উক্ত বিষয় নিয়ে মতিঝিল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদের সাথে মুঠোফোনে কথা বলা হলে বিস্তারিত শোনার পর উনি বলেন,এ বিষয়টি আমার জানা নেই, এমন কি কেউ আমাকে জানায়নি।যদি ঘটনাটির সত্যতা থাকে তাহলে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে অভিযুক্ত অফিসারের (মোনাক্কা) বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির ডিসিপ্লেন শাখার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলা হলে উনি বলেন, যদি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য প্রমান থাকে তাহলে আমার তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
উল্লেখ্য দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তা মোনাক্রকার কল রেকর্ড ও জোরপূর্বক ঘুষ গ্রহণের ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে সংরক্ষিত রয়েছে ।
Leave a Reply