সাভার প্রতিনিধিঃ সাভারে চাঁদাবাজি যেনো যুবলীগ নেতাদের অঘোষিত কোন বিশেষণে পরিনত হয়েছে। সন্ত্রাস চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের অভিযোগের অন্ত নেই সাভার থানা যুবলীগের বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধুর মতাদর্শের সৈনিক যুবলীগের এমন নৈরাজ্য পূর্ণ আচরণে ক্ষুভ প্রকাশ করেছেন সাভারের অনেক আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা কর্মী। সম্প্রতি সাভারে চাঁদার দাবিতে একটি নির্মানাধীন ভবনে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম মন্ডলের ভাই যুবলীগ নেতা জুয়েল মন্ডল ও তার বাহীনির বিরুদ্ধে। এসময় চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ভবনটির দায়িত্বে থাকা স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল কাদির মোল্লাকে মারধরসহ হত্যার চেষ্টা করেছে অভিযুক্তরা। এঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ অভিযোগ করা হলেও বিষয়টি মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে গড়িমসির অভিযোগের তীর পুলিশের বিরুদ্ধে।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের দত্তপাড়া গ্রামের মোঃ আমির হোসেনের ছেলে মোঃ আব্দুল কাদির মোল্লা স্থানীয় আশুলিয়া মডেল টাউনের এ ব্লকের ৭ নং রোডের রফিকুল ইসলামের বাড়ি নির্মান কাজের মালামাল সরবরাহ করে আসছেন। কাজ শুরুর পর থেকেই বিরুলিয়া ইউনিয়নের আকরান গ্রামের মৃত ইব্রাহিম মন্ডলের ছেলে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী জুয়েল মন্ডল (৩৯), নজর আলীর ছেলে মোঃ সোহেল (৩৮), রাজ্জাক মাস্টারের ছেলে মোঃ মনির হোসেন (৩৮), সামাইর গ্রামের কাশেম গাছির ছেলে মাছুম গাছি (৩৫), দত্তপাড়া গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে মোঃ জাবেদ (৩৫), সাভার পৌর এলাকার মজিদপুর মহল্লার ফজল মন্ডলের ছেলে রুবেল মন্ডলসহ (৩২) অজ্ঞানামা সন্ত্রাসীরা পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদানসহ প্রানণাশের হুমকি দিয়ে আসছিলো।
একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযুক্ত চাঁদা দাবিকারীগণসহ অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রে সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নির্মানাধীন ভবনটিতে হামলা চালিয়ে নির্মান শ্রমিকদের কাজে বাঁধা প্রদান করে। এসময় সন্ত্রাসী জুয়েল মন্ডল ইউপি সদস্য আব্দুল কাদির মোল্লার কাছে দাবিকৃত পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চাইলে সে তা দিকে অপারগতা প্রকাশ করে। এঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে জুয়েল মন্ডল, সোহেল, জাবেদসহ অন্যন্যরা কাদেরের উপর হামলা চালিয়ে মারধর করে এবং সাথে থাকা নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
বিরুলিয়া ইউনিয়ন ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইদ্রিস মোল্লা বলেন, আব্দুল কাদের মেম্বারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করেছে সন্ত্রাসী জুয়েল মন্ডল ও তার সহযোগীরা। কাদের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগেরও সাধারন সম্পাদক।
বিরুলিয়া ইউয়িন আওয়ামী লীগের সভপতি আব্দুল হালিম বলেন, আমাদের দলীয় নেতা এবং জনপ্রতিধিকে মারধরের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গ সংঠনের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এঘটনায় আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি। এছাড়া সাধারন সম্পাদক আব্দুল মালেক জানান আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকৃত ঘটনা তদন্তপূর্বক হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
ভুক্তভোগী আব্দুল কাদের মোল্লা বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমাকে ফোনে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্য করতে হলে তাদেরকে চাঁদা দিতে হবে। বৃহস্পতিবার ৫ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে বিরুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম মন্ডলের ভাই শীর্ষ সন্ত্রাসী জুয়েল মন্ডল ও তার সহযোগী বিএনপি’র শীর্ষ সন্ত্রাসী সোহেল, জাবেদ, মনির, মাছুম গাছি, রুবেল মন্ডল, তাওহিদ মন্ডল, তানভীর মন্ডলসহ অজ্ঞাত পরিচয় অর্ধশতাধিক লোকজন লাঠিসোঠা নিয়ে আমার বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে প্রাণ নাশের হুমকি দিতে থাকে। এর আগে জুয়েল মন্ডলের নেতৃত্বে অন্তত ১৫ জন মিলে আশুলিয়া মডেল টাউনের ভিতরে আমাকে ও আমার চাচাতো ভাইকে মারধর করে। ঘটনাটি আমি দলীয় নেতাকর্মীদের জানিয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এর আগে সন্ত্রাসী জাবেদ ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার উপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং আমার বাড়িতে গুলি চালায়। আমি আইনের মাধ্যমে এসব সন্ত্রাসীদের শাস্তি দাবি করছি।
তবে হামলা ও মারধরের বিষয়ে জানতে বিরুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক অভিযুক্ত জুয়েল মন্ডলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া সোহেলের সাথে কথা বলে তিনি বিষয়টি নিয়ে পড়ে কথা বলবেন বলে মোবাইলের লাইন কেটে দেয়।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ইউপি সদস্যকে মারধরের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী যেই হোক না কেন তাকে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। দল-মত-নির্বিশেষে সাভার থানা পুলিশ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর।
Leave a Reply